ঢাকা, ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নারীদের দাম্পত্য জীবনের গল্প শুনতে চাইত সেনারা

প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ডিসেম্বর ২১, ২০২১ ৮:২২ অপরাহ্ণ  

| Hanif Khan

***বিবিসির অনুসন্ধানী প্রতিবেদন***

মিয়ানমারে বন্দিশিবিরে আটক নারীদের দাম্পত্য জীবনের গল্প শুনতে চাইত সেনারা। এ ছাড়া নানাভাবে করা হতো যৌন হয়রানি। কারাগার থেকে ছাড়া পাওয়ার পর সেনা হেফাজতে নির্যাতনের রোমহর্ষক সব বর্ণনা দিলেন কয়েকজন নারী।

বিবিসির এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে গণহত্যার মতো অপরাধ করছে মিয়ানমারের বর্বর সেনাবাহিনী। এসব মানবতাবিরোধী অপরাধ নিয়ে ধারাবাহিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বিবিসি। সর্বশেষ সোমবার ‘টরটার্চড টু ডেথ : মিয়ানমার ম্যাস কিলিং রিভিলড’ শিরোনামে বিশেষ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ পেয়েছে। এর আগে সেনাদের নারী নির্যাতন নিয়ে আরও একটি প্রতিবেদন করে সংবাদমাধ্যমটি। সেনা অভ্যুত্থানের পরপরই আটক হওয়া পাঁচ নারীর সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে ‘মিয়ানমার কু : দ্য উইমেন অ্যাবিউজড অ্যান্ড টরচার্ডড ইন ডিটেশন’ শিরোনামের প্রতিবেদনটি চলতি মাসের প্রথম দিকে (৯ ডিসেম্বর) প্রকাশিত হয়। সাক্ষাৎকারে নিজেদের ওপর ভয়াবহ ও নজিরবিহীন নির্যাতন ও নিপীড়নের বর্ণনা দেন ওই নারীরা।

বিবিসির প্রতিবেদন মতে, আটকের পর নারী বন্দিদের ওপর ভয়াবহ নির্যাতন চালানো হয়েছে। অন্তত আটজন নারী সেনা হেফাজতে মারা গেছেন। এদের মধ্যে চারজনকেই পেটাতে পেটাতে মেরে ফেলা হয়েছে। এ ছাড়া বহু নারীকে এমনভাবে পেটানো হয়েছে যে তাদের চেহারা বিকৃত হয়ে গেছে। গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যোগ দেওয়ায় আটক করা হয় অধিকারকর্মী এইন শোয়ে মাইকে। এরপর তাকে প্রায় ছয় মাস বন্দি রাখা হয়। সম্প্রতি দেশজুড়ে প্রায় পাঁচ হাজার কারাবন্দিকে মুক্তি দেয় জান্তা সরকার। মুক্তি পাওয়াদের মধ্যে শোয়ে মাইও ছিলেন। বিবিসির সাক্ষাৎকারে শোয়ে মাই জানান, আটকের পর প্রথম ১০ দিন তাকে রাখা হয় মিয়ানমারের কুখ্যাত এক বন্দিশিবিরে। এখানেই তার ওপর অবর্ণনীয় যৌন নির্যাতন চালানো হয়। তিনি বলেন, আটকের কয়েক ঘণ্টা পর তাকে এক অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর চোখ বেঁধে ফেলা হয়। তারপর শুরু হয় জিজ্ঞাসাবাদ। শোয়ে মাই বলেন, কয়েকজন অফিসার তাকে একটার পর একটা প্রশ্ন করতে থাকে। আর তিনি উত্তর দিতে থাকেন। কোনো প্রশ্নের উত্তর পছন্দ না হলেই বাঁশ দিয়ে মাথায় আঘাত করা হতো। শোয়ে মাই আরও জানান, জিজ্ঞাসাবাদে সেনারা তার দাম্পত্য ও যৌন জীবনের গল্প শুনতে চাইত। শোয়ের কথায়, ‘এক প্রশ্নকর্তা আমাকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলল, তুমি কি জানো এখানে আমরা নারীদের কী করি। আমরা তাদের ধর্ষণের পর মেরে ফেলি।’ এরপর চোখ বাঁধা অবস্থাতেই তাকে যৌন হয়রানি করা হয় বলে জানান শোয়ে। তিনি বলেন, ‘তারা আমার জামা ধরে টান দেয়। শরীর আলগা করে আমাকে বাজেভাবে স্পর্শ করে।’

মিয়ানমারে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনী। এর পরই দেশজুড়ে শুরু হয় বিক্ষোভ-প্রতিবাদ আন্দোলন। চলমান এই আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে নারীরা। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, শুরুতেই ঢালাও আটক-গ্রেফতার, গুম, হত্যা ও নির্যাতন-নিপীড়নকে আন্দোলন দমানোর কৌশল হিসাবে নেয় সেনাবাহিনী। তবে সময় যত গড়িয়েছে, এর মাত্রা ততই বেড়েছে। বিবিসি জানায়, গণতান্ত্রিক আন্দোলন রোধ করতে পুরুষদের পাশাপাশি বহু নারীকে রাতের আঁধারে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর বন্দিশিবিরে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের নামে তাদের ওপর অকথ্য নিপীড়ন চালানো হয়। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মিয়ানমার বিষয়ক গবেষক ম্যানি মং বলছেন, নারীদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সেনা ব্যারাক বা পরিত্যক্ত কোনো বাড়িতে অস্থায়ী বন্দিশিবির গড়ে তোলা হয়েছে। এসব বন্দিশিবিরে নারীদের একাকী আটকে রাখা হয়। মিস লিন নামে এক অধিকারকর্মী কিভাবে তাকে ইয়াঙ্গুনের একটি বন্দিশিবিরে ৪০ দিনেরও বেশি সময় ধরে আটক

রাখা হয় তার বর্ণনা দিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘আমাকে একটি অন্ধকার ঘরে ফেলে রাখা হতো। সেখানে আমার মনে হতো, আমি মরে যাচ্ছি। মাঝে মাঝে নিকটস্থ অন্য ঘর থেকে চিৎকারের আওয়াজ শুনতে পেতাম। ভাবতাম, আমার মতোই হয়তো কাউকে পেটানো হচ্ছে।’

স্থানীয় মানবাধিকার সংস্থা অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজোনারস’র (এএপিপি) তথ্য মতে, বিক্ষোভে সেনাবাহিনীর অভিযানে এক হাজার ৩১৮ জন নিহত হয়েছেন। যার মধ্যে অন্তত ৯৩ জন নারী। প্রতিবাদ করায় চলতি ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশজুড়ে ১০ হাজার ২০০ জনের বেশি মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে নারীর সংখ্যা দুই হাজারের বেশি। গ্রেফতারের পর এসব বন্দির ওপর সেনা-পুলিশের ভয়াবহ নির্যাতন ও নিপীড়নের রিপোর্ট প্রায়ই আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। লিঙ্গভেদে এসব নির্যাতনের ধরনও ভিন্ন হয়ে থাকে।

বিনোদন, লাইফস্টাইল, তথ্যপ্রযুক্তি, ভ্রমণ, তারুণ্য, ক্যাম্পাস ও মতামত কলামে লিখতে পারেন আপনিও – example@gmail.com ইমেইল করুন  

সর্বশেষ

জনপ্রিয় সংবাদ